‘পয়লা বৈশাখ’ হবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস, বিধানসভায় প্রস্তাব পাস

Follow Us

Follow Us

‘পয়লা বৈশাখ’ দিনটিই পালন করা হবে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিধানসভায় এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব পাস হয়েছ। এদিন ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ নিয়ে আলোচনার পর এই প্রস্তাব নিয়ে ভোটাভুটি হয়। সেখানে প্রস্তাবের পক্ষে ১৬৭টি ভোট পড়ে, বিপক্ষে পড়ে ৬২টি ভোট।

একইসঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা ‘বাংলার মাটি বাংলার জল, বাংলার বায়ু, বাংলার ফল…’কে রাজ্যসংগীত করা হবে বলেও প্রস্তাব পাস হয়। তবে প্রস্তাব পাস হলেও তাতে রাজ্যপালের স্বাক্ষর প্রয়োজন। যদিও রাজ্যটির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী আগেই হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন সংখ্যার জোরে এই প্রস্তাব বিধানসভায় পাস করিয়ে নিলেও রাজ্যপালকে তাতে স্বাক্ষর করতে দেবেন না।

এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী এদিন স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘পয়লা বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে যদি রাজ্যপাল স্বাক্ষর নাও করেন তাতেও আমাদের কিছু যায় আসে না। আমরা এই দিনটাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করব। আমরা দেখতে চাই কার শক্তি বেশি! জনগণের শক্তি বেশি, নাকি রাজ্যপালের শক্তি বেশি।’

 

এর আগে, রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস ‘পয়লা বৈশাখ’ বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘বাংলার ক্যালেন্ডারে যে প্রথম দিনটা রয়েছে তা হলো পয়লা বৈশাখ। এদিন হালখাতার মধ্যে দিয়ে মানুষ তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করে, শুভ কাজের উদ্বোধন করে। সেই পয়লা বৈশাখ দিনটিকে আমরা পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে ঘোষণা করতে চাই। তাছাড়া সাহিত্যিক, ক্রীড়াবিদ, বিদ্বজন, সাংবাদিক, হিন্দু মহাসভা, ইমাম অ্যাসোসিয়েশনসহ সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে নিয়ে নবান্নে যে বৈঠক করেছি, সেখানে ৯৯ শতাংশ মানুষই পয়লা বৈশাখকেই ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ হিসেবে রাখার প্রস্তাব রেখেছেন।’

সম্প্রতি, ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে দেশটির সমস্ত রাজ্যের রাজ্যপাল এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের শাসকদের সচিবদের কাছে নোটিফিকেশন পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় শাসিত অঞ্চলের প্রতিষ্ঠা দিবসের তালিকা উল্লেখ করা হয়। সেই তারিখ অনুযায়ী ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ধার্য করা হয়।

যদিও রাজ্যের পক্ষে সেই দিনটির তীব্র বিরোধিতা করা হয়। রাজ্যের অভিমত, রাজ্য সরকারের সাথে আলোচনা না করে, বিধানসভার অনুমতি না নিয়েই কেন্দ্রীয় সরকার একতরফাভাবে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস হিসেবে ঘোষণা দিচ্ছে। এর ফলে সমগ্র রাজ্যবাসীর কাছে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

মমতা বলেন, আমরা স্বাধীনতার ৭৫ বছর পূর্তি পালন করছি। কিন্তু কোনোদিন কেউ শুনিনি যে ২০ জুন বাংলা দিবস পালন হচ্ছে। ভারত সরকারের পক্ষে নোটিফিকেশন দেওয়ার সাথে সাথে আমরা প্রতিবাদ করি। এমনকি আমরা রাজভবনে গিয়েও রাজ্যপালকে চিঠি দিয়ে তাকে জানাই, এটা যেন না করা হয়। তার কারণ এর সাথে বাংলার কোনো সম্পর্ক নেই।

তার অভিমত ‘আমরা যদি বিধানসভা থেকে বা সরকারের তরফে যদি কোন সিদ্ধান্ত না নিই, তবে ভুল দিনটাই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে থেকে যাবে। সেক্ষেত্রে আমাদের আগামী প্রজন্ম একটা ভুল দিনের সাক্ষী হয়ে থাকবে।’

অন্যদিকে রাজ্যের সংগীত হিসেবে ‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’কে বেছে নেওয়া কারণ হিসেবে মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘বাংলার একটা নিজস্ব সংগীত থাকা উচিত, যেটা অন্য রাজ্যেরও আছে। আমরা অনেক চিন্তাভাবনা ‘রাখি বন্ধন’কে মর্যাদা দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে গানটি লিখেছিলেন…‘বাংলার মাটি, বাংলার জল’ তাকেই রাজ্য সংগীত করার সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। সকলের মতামত নিয়েই এটাই সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা মনে করি এমন একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা উচিত, যেটা মানুষের মনে প্রাণে লেগে আছে।’

এদিকে, পয়লা বৈশাখ পশ্চিমবঙ্গ দিবস করার প্রস্তাব নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পাগল বলে কটাক্ষ করেছেন বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। তার অভিমত, ‘পাগল মুখ্যমন্ত্রী। তার কাটা। উনি পরিচালক রাকেশ রোশনকে চাঁদে পাঠান।’

এ প্রসঙ্গে অধীর চৌধুরী বলেন, পশ্চিমবঙ্গ পশ্চিমবঙ্গই আছে। স্বাধীনতার সময় ভাগ হয়ে গেছে। তারপরে আবার নতুন দিবস কী করব? তার অভিমত, ‘যাহা ইন্ডিয়া, তাহাই ভারত। ঠিক একইভাবে পশ্চিমবঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গ দিবস হবে, না কি বাংলা দিবস হবে, তাই নিয়েও অপ্রাসঙ্গিক আলোচনার বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।’

পশ্চিমবঙ্গের বদলে রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখা নিয়েও এদিন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করছি না। বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র। মনে রাখতে হবে আমরা এই রাজ্যটাকে ‘বাংলা’ নামকরণের কথা বলেছিলাম, তার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। বাংলা নামটা (ইংরেজিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল নাম থাকার কারণে সর্বভারতীয় স্তরে যেকোনো আলোচনায় সবার শেষে ওয়েস্ট বেঙ্গলের প্রতিনিধিদের বলার সুযোগ আসে) একেবারে শেষে বলা হয়, কারণ ওয়েস্ট বেঙ্গল আছে তাই। কিন্তু আমরা কেন শুধু ‘বাংলা’ বলতে পারি না? পাঞ্জাব পাকিস্তানেও আছে, ভারতেও আছে। সেক্ষেত্রে যদি পাঞ্জাব নামে ভারতের রাজ্য করা যেতে পারে, তবে বাংলাদেশ একটা আলাদা রাষ্ট্র এবং বাংলা একটা আলাদা রাজ্য। বাংলাও করা যেতে পারে। আজ হয়তো আপনারা (বিজেপি) ক্ষমতায় আছেন, আপনারা করলেন না। কিন্তু কাল যখন আপনারা ক্ষমতা থেকে উল্টাবেন তখন আমরা এটা করে দেব।’

উল্লেখ্য, বাংলার নাম বদল নিয়ে ২০১৮ সালের ২৬ জুলাই রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব পাস হয়। বাংলা, হিন্দি এবং ইংরেজি-তিন ভাষাতেই রাজ্যের নাম ‘বাংলা’ রাখার জন্য প্রস্তাব পেশ করে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। বাম ও কংগ্রেসের সমর্থনে সেই প্রস্তাব পাসও হয়ে যায়। পরে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রপতি ভবনে। কিন্তু প্রায় পাঁচ বছর কেটে গেলেও তাতে সীলমোহর পড়েনি। ২০১৯ সালে রাজ্য সভায় তৃণমূলের পক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে নাম পরিবর্তনের বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়। তখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিত্যানন্দ রাই জানিয়ে দেন রাজ্যের নাম পরিবর্তন করতে গেলে আগে সংবিধানে সংশোধন করা প্রয়োজন।

সমস্ত খবরের সাথে আপডেট থাকতে গ্রুপ এ যোগ দিন

Facebook
Telegram
WhatsApp